বাংলাদেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হয়েছে - awami league ban news, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে নাকি এখনো কার্যক্রম চালু রয়েছে এবং আওয়ামী লীগের বিচার কার্যক্রম কিভাবে হবে এর সকল তথ্য নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কি নিষিদ্ধ হয়েছে - awami league ban news
এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল; শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিষয়ক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ; বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান; তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে আইন বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল লিখিত বক্তব্যে জানান, " সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। এই সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোন রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গ সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। "
আইন বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এই প্রেস ব্রিফিং এ আরো জানান, "উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস সহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।"
তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্ম দিবসে জারি করা হবে। এর পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জুলাই ঘোষণা পত্র আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়
বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন দল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি পুরনো রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে নানা ধরনের অপকর্ম এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে।
এ রাজনৈতিক দলটি সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সাধারণ ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তাদের দাবি না মেনে উল্টো বল প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণ ছাত্র জনতার উপর হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে।
এই জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার হত্যাকাণ্ডে হাজারের বেশি ছাত্র জনতা নিহত হয় এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয় যারা এখনো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এতে দেশব্যাপী সবার কাছে আওয়ামীলীগ সরকার ঘৃণিত হয়।
৫ ই আগস্ট ২০২৪ ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার এর সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যান।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময় এ দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এর ছত্রছায়ায় লালিত পালিত ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।
৭ই মে ২০২৫ আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ গভীর রাতে নিরাপদে দেশ ছাড়ায় নতুন করে ছাত্র-জনতার মনে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবি উঠে।
আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধের দাবিতে জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বাধীন শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অস্থায়ী মঞ্চ করে অবস্থান নেয়।
৮ই মে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনের প্রথম ডাক দেন নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।পরবর্তীতে এই আন্দোলনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন, ইউনাইটেড পিপাস বাংলাদেশ বা আপ বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীরা যোগ দেন।
আন্দোলনকারীরা যমুনার সামনেই শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেন এবং বিকেল তিনটার দিকে শাহাবাগ চত্বরে গণজামায়াতের কর্মসূচির ডাক দেন।
এই আন্দোলনের তীব্র চাপে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ১০ই মে শনিবার রাতে উপদেষ্টার যমুনার বাসভবনে বিশেষ এক বৈঠকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বড় রাজনৈতিক সংগঠন ও রাজনৈতিক প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর শাহবাগে আন্দোলনরত ব্যক্তিদের মাঝে উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনের চাপে বিশেষ বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সন্ত্রাসী বিরোধী আইনের আওতায় জুলাই আন্দোলনের ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এর সাইবার স্পেস সহ যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছেন।
অন্তবর্তী সরকার এর প্রধান উপদেষ্টা সভাপতিত্বে যমুনার বাসভবনের বৈঠকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির সাইবার স্পেস সহ যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
প্রথম কার্যদিবস অর্থাৎ সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণা পত্র চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বিপ্লবী ছাত্র জনতা কে অভিনন্দন জানিয়ে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ এর নিবন্ধন দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।
0 Comments