টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট

বহু প্রতীক্ষিত টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ২০২৫ সালের সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অনুযায়ী প্রায় ১৫ লাখ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ পুনরায় টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। 


টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট



বন্ধুরা এখন অনেকেই প্রশ্ন করবেন, এই টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড কি ? আসুন আজকে আর্টিকেল থেকে টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের রায় সংক্রান্ত তথ্য এবং সংক্রান্ত পরিপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। এই সম্পর্কিত তথ্য জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন।  আশা করি এটি আপনাদের সহায়ক হবে। 



টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন।৩০ শে এপ্রিল ২০২৫ বুধবার সকালে আপিল বিভাগ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বেঞ্চ হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট রায়ে সংশোধন করে এই রায় ঘোষণা হয়। 


২০২৫ আপিল বিভাগের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের রায় অনুযায়ী, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ কার্যকর হওয়ার পূর্বে পর্যন্ত যে সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ একটি টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেট পেয়েছিলেন তারাও পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড (সাধারণত ১৬ বছর চাকরি পূর্ণ হওয়ায় দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেড) ২০২৫ বেতন স্কেলের অধীনে পাবেন।


পূর্বে উচ্চতর গ্রেড সুবিধা প্রার্থীরা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড অর্থাৎ নতুন বেতনে স্কেলের স্বয়ংক্রিয়তায় তাদেরকে উচ্চতর গ্রেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে না। এর ফলে দুটি উচ্চতর গ্রেট পেতে আর কোন আইনি বাধার সম্মুখীন হবেন না  প্রায় ১৫ লাখ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। 


আপিল বিভাগের এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড এবং উচ্চতর গ্রেডের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন। 


জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ কার্যকর হওয়ার পূর্বে পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বেতন পেতেন। কিন্তু জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ পরিপত্রে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রথাটি বাতিল বাতিল করে নতুন নিয়ম চালু করা হয়। 


এই নিয়ম অনুযায়ী একই পদে কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের জন্য আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করতে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ৭ (১) বলা হয়েছে, ' কোন কর্মচারী একই পদে দশ বছর সন্তোষজনকভাবে চাকরি পূর্ণ করলে এবং এর মধ্যে কোন পদোন্নতি না পেয়ে থাকলে, তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী ১১তম গ্রেড উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্ত হবেন। 

 

একইভাবে প্রথম উচ্চতর গ্রেট প্রাপ্তির পর আরো ছয় বছর উক্ত পদে অর্থাৎ চাকরির ১৬ বছর বয়সে একই পদে সন্তোষজনকভাবে চাকরি পূর্ণ করলে এবং এর মধ্যে কোন প্রকার পদোন্নতি না হলে, তিনি দ্বিতীয় উচ্চতর গ্রেড (দশম গ্রেড বা প্রযোজ্য হলে পরবর্তী গ্রেড) প্রাপ্ত হবেন। 


আদালতে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল অনিক আর হক রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি দেন এবং জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন এবং আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল ছিলেন রিট আবেদনকারীদের পক্ষে। 


স্পষ্টিকরণ সংক্রান্ত পরিপত্রের প্যারা -গ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে আইনজীবী ইব্রাহিম খলিল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এর ফলে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর উচ্চতর গ্রেড সংক্রান্ত প্যারা -৭ বহাল রয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ কার্যকর হওয়ার পূর্বে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রাপ্ত কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ দুটি উচ্চতর গ্রেড পাবেন। এতে আর কোন আইনি বাধা রইল না। 


জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ কার্যকর হওয়ার পর সরকার ২১শে সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ স্পষ্টিকরণ নামক একটি পরিপত্র জারি করে। কয়েকজন সরকারি চাকরিজীবী এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের রিট করেন। হাইকোর্ট এর প্রাথমিক শুনানি শেষে রুলস সহ আদেশ দেন। হাইকোর্ট চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের শাড়ি জানুয়ারি পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করেন। 


এরপরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের কাছে ওই রায়ের বিরুদ্ধে অনুমতি চেয়ে 'লিভ টু আপিল' করেন। কিন্তু আপিল বিভাগ মঞ্জুর করে ২০২০ সালের ৪ই ফেব্রুয়ারি এবং হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। অবশেষে ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল বুধবার দীর্ঘ শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক আপিল ও লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ উক্ত রায় ঘোষণা করে। 



টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট



টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড কি

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড হলো সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর অথবা শর্ত পূরণ সাপেক্ষে পদোন্নতি না হলেও একটি উচ্চতর বেতন গ্রেড দেওয়া হয়। 


জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ কার্যকর হওয়ার পূর্বে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রচলিত দুটি ব্যবস্থা ছিল। এ ব্যবস্থায় চাকরির ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের নির্দিষ্ট পদ থেকে পদোন্নতি না হলেও প্রথম আট বছর চাকরির পূর্তিতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান করা হতো।এভাবে সর্বমোট তিনবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পেতেন।


একজন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ তিন বার দেওয়া হতো।  চাকরির প্রথম ৮ বছর পূর্তিতে প্রথমবার, চাকরির ১২ বছর পূর্তিতে দ্বিতীয়বার এবং চাকরির ১৫ বছর পূর্তিতে তৃতীয়বার টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেওয়া হতো। 


কিন্তু অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল অর্থাৎ জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ -তে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল ঘোষণা করা হয় এবং জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ -তে উচ্চতর গ্রেড চালু করা হয়। 


এই নীতিমালা অনুযায়ী, একজন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী চাকরির প্রথম ১০ বছর পূর্তিতে প্রথমবার এবং চাকরির ১৬ বছর পূর্তিতে দ্বিতীয় বার উচ্চতর গ্রেড স্কেল পাবেন। এতে একজন সরকারি কর্মকর্তা তার চাকরি জীবনে মোট দুইবার উচ্চতর গ্রেড স্কেল পাবে। 



টাইম স্কেল সংক্রান্ত পরিপত্র

জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কর্মচারীদের জন্য একটি নতুন পরিপত্র প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়েছিল। যা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ নামে  পরিচিত। 


এ পরিপত্রে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল ঘোষণা দিয়ে নতুন করে উচ্চতর গ্রেড চালু করা হয়। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর ৭ অনুচ্ছেদে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেডের প্রাপ্যতা সংক্রান্ত উল্লেখ করা হয়েছে।


জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর ৭ (১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, কোন স্থায়ী কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়া একই পদে দশ বছর চাকরির পূর্তিতে এবং চাকরির সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে ১১ তম বছরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন। 


জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর ৭ (২) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, কোন সরকারি কর্মচারী চাকরির ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেট বেতন প্রাপ্তির পরবর্তী ৬ বছরেরও কোন পদোন্নতি না হলেও সপ্তম বছরে অর্থাৎ চাকরিজীবনের ১৬ বছর পর ১৭ তম বছরে চাকরি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন প্রাপ্ত হবেন। 


জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর ৭ (৩) অনুচ্ছেদে উক্ত বিষয়েউল্লেখ করা হয়েছে যে , ৭ (১) ও  ৭ (২) অনুচ্ছেদে উল্লেখিত আর্থিক সুযোগ-সুবিধা চতুর্থ গ্রেট বেতনের স্কেল পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে।এই আদেশের অধীনে তার ওপরের গ্রেডের অর্থাৎ চতুর্থ গ্রেডের কোন সরকারি কর্মকর্তা তৃতীয় গ্রেড বা তার উপরের গ্রেডের বেতন স্কেল পাবেন না। 



৩০ শে এপ্রিল ২০২৫ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত রায় অনুযায়ী, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের একই পদে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ নুতন আইন অনুযায়ী টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পাবে। এ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড এর সাথে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার সুযোগ সুবিধা পাবেন। 


আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের রায় এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড সংক্রান্ত তথ্য জানতে পেরেছেন। 

Post a Comment

0 Comments